Movie: Agent Sai Srinivasa Athreya
Genre: Comedy/Detective thriller
ভাষাগত বাধ্যবাধকতা আর সঠিক প্রচার এর অভাবে অনেক সিনেমাই লাইম লাইটে আসতে পারে না। বিশেষ করে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের তামিল, তেলেগু, মালয়ালাম ইন্ডাস্ট্রির অনেক কোয়ালিটিফুল সিনেমাও আমাদের সামনে আসে না। এমন ই একটি সিনেমা Agent Sai Srinivasa Athreya.
সিনেমার গল্পটা আর দশটা ক্রাইম থ্রিলার বা কমেডি মুভির মত না। এই সিনেমায় হিউমার থ্রিলার আর ইমোশন এর একটা অভিনভ ব্লেন্ড আছে যেটা সচরাচর ভারতীয় কোনো সিনেমায় দেখা যায় না। ব্যক্তিগতভাবে আমি হিন্দি ডাবিং পছন্দ করি না কিন্তু সাবটাইটেল দিয়ে দেখা অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ তাই হিন্দি ডাবিং টাই দেখতে হয়েছে। তবে এইটা একটা মাস্ট ওয়াচ সিনেমা বলা যায়। সিনেমাটার কিছু বিশেষ দিক নিয়ে আলোচনা করা যাক...
(No spoiler)
স্টোরি: আমি বিশ্বাস করি একটা সিনেমার মূল নায়ক হলো সেটার গল্প। যখন সিনেমার গল্পে কোনো দম থাকে না তখন বড় বড় স্টার কে কাস্ট করতে হয়। এই সিনেমায় কোনো বড়ধরণের স্টার না থাকলেও এই সিনেমার গল্পটা অভাবনীয়। আমরা সাধারণত একটা ডিটেকটিভ মুভি দেখার সময় কি চিন্তা করি? চিন্তা করি যে, ওই মানুষ টা একদম জিনিয়াস হবে, কমন ম্যান এর মতো তার আচরণ হবে না, ও সবসময় ক্রিমিনাল এর চেয়ে এক ধাপ আগায় থাকবে। কিন্তু এই গল্পের পার্স্পেক্টিভ টা টোটালি ভিন্ন। যেটাই আসলে এই গল্পটাকে এতটা ইউনিক আর রিলেটেবল বানায়। এখানে এজেন্ট সাই নামের যে মূল চরিত্র সে আসলে একদম তুখোড় কোনো ডিটেকটিভ না। সে ইন্টেলিজেন্ট, কিন্তু জিনিয়াস না। তার আচরণ অনেক সোফিস্টিকেটেড না। সে অনেক চেষ্টা করে "টেক্সটবুক ডিটেকটিভ" দের যে সোফিস্টিকেটেড আচরণ সেটাকে কপি করার। আর এই আচরণের কারণেই গল্পটা অনেক বেশি হাস্যরসাত্মক হয়ে উঠে। অনেক লাইট হার্টেড আর শালীন একটা কমেডি দেখতে পাবেন এই সিনেমার শুরু থেকে। শুরুর হাফ টা বলা যায় অনেকটা পৃথিবীর সব ডিটেক্টিভ সিনেমার একটা প্যারডির মতো। মানে আপনার আমার মত একজন সাধারণ মানুষ যদি ডিটেকটিভ হয়ে যেতে চায়, তাহলে সেটা দেখতে আসলে কেমন হবে, বিষয়টা কতটা ফানি হবে আর পারিপার্শ্বিকতা কিভাবে সেটাকে দেখবে এই পুরো সিনাওটার একটা নমুনা আপনি দেখতে পাবেন। গল্পের আরেকটা অসাধারণ দিক হইলো এটার প্লট টুইস্ট। শুরুতে দেখে খুব ই বেসিক কমেডি সিনেমা মনে হইলেও হুট করে প্রথম হাফের পর যখন গল্প মোড় নেয়া শুরু করে তখন সিনেমায় থ্রিল টা হাজার গুণে বেড়ে যায়। কাহিনী কখন কোন দিকে মোড় নিবে এইটা প্রেডিক্ট করা অনেক কঠিন হয়ে পরে। যদিও এর মধ্যেই কমিক টাইমিং অনেক ভালো থাকে, ওই লাইট হার্টেড কমেডি টা বজায় থাকে কিন্তু এর পাশাপাশি থ্রিল আর ইন্টেনসিটি টাও বাড়তে থাকে। একজন ডিটেকটিভ এর একটা ক্রাইম সলভ করতে যেই যেই এলিমেন্ট গুলো দরকার তার সবকিছু এই সিনেমার প্লট গুলোতে আছে। আনপ্রেডিক্টেবল সিচুয়েশন, ইনভেস্টিগেশনে একটা ডেড এন্ডে চলে যাওয়া, লাক ফেভার করা, ডিডাকশন করা, দূরদর্শী হওয়া এই সবকিছু মূল চরিত্রের সাথে এই সিনেমায় ঘটে, যা প্রতিটা ক্লাসিক ডিটেকটিভ সিনেমায় ঘটতে দেখা যায়। কিন্তু সবকিছুর মধ্যেই একটা দেশী ভাব আছে। মানে বোঝা যায় যে এইটা শুধুমাত্র ভারতীয় উপমহাদেশের মত জায়গাতেই ঘটতে পারে। এর মধ্যে আবার একটা ভিন্ন টুইস্ট ও আছে যেটা সচরাচর ডিটেকটিভ সিমেমায় দেখা যায় না। এত সব কিছুর মধ্যেও গল্পে বেশ কিছু ইমোশনাল সিন ছিলো প্লাস একটা সোশাল ম্যাসেজ ও ছিলো। সব দিক দিয়ে বলা যায় সিনেমার গল্পটাই এই সিনেমার অন্যতম নায়ক যা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনার মনযোগ ধরে রাখবে।
ডায়লগ & স্ক্রিনপ্লে: সিনেমার স্ক্রিনপ্লে আর ডায়লগ গুলো অসাধারণ। যে ধরণের ডার্ক কমেডি আর কমিক টাইমিং সিনেমায় দেখা গেছে তা আসলেই চমকপ্রদ ছিল। কমেডি সিন গুলোতে জেনুইনলি আপনার হাসি পাবে। কোনো কমেডি সিন জোর করে ইনক্লুড করা হয়েছে বলে মনে হবে না। ক্যারেক্টার গুলোর সাথে আপনি নিজেকে রিলেট করতে পারবেন আর তাদের সাথে এক প্রকার সহমর্মিতা তৈরি হবে। যে ধরণের উচ্চমানের রেফারেন্স এই সিনেমায় দেয়া হয়েছে তাতে বোঝা যায় সিনেমার লেখকের রুচি বেশ মানসম্মত। The Usual suspect, Shawshank redemption, Shutter island, The Departed, Sherlock Holmes, Catch me if you can প্রমুখ আরও অনেক হাইলি রেটেড সিনেমার রেফারেন্স এই সিনেমায় দেয়া হয়েছে। সিনেমাটা শুধু মূল চরিত্রের চারিদিকে ঘোরাফেরা করে না। প্রতিটা চরিত্রের একটা বিশেষ সিগনিফিক্যান্স আছে যেটা অনেক ভালোমতো সিনেমায় ফুটে উঠেছে। ডায়লগ গুলো অনেক বেশি ভনিতা করে বলা হয়েছে বলে মনে হয়নি। ডে টু ডে লাইফে যেভাবে কথা বলা হয় সেরকম কথাবার্তার সাথে মিলিয়েই ডায়লগ গুলো লিখা। সবচেয়ে ভালো বিষয় ছিলো যেইভাবে স্ক্রিনপ্লের মধ্যে কমেডি আর থ্রিলার এর ভিতরেও ইমোশনাল সিন গুলোকে এডজাস্ট করা হয়েছে। এক মুহুর্তের জন্যও মনে হয়নি যে এই সিন টা সিনেমার মোমেন্টাম টা কে নষ্ট করে দিচ্ছে। এই থ্রিলিং গল্পের মধ্যেও কমেডি সিন গুলো বেশ ভালোমতো ব্লেন্ড করা ছিলো। ইনটেন্সিটির মধ্যেও একটু একটু হাস্যকর মুহুর্ত আপনাকে হাসাতে থাকবে। স্ক্রিনপ্লে টা অনেক বেশি এংগেজিং। এক মুহুর্তের জন্যও বোরিং মনে হবে না। শেষ পর্যন্ত কৌতুহল টা বাড়তে থাকবে। প্রতিটা সিন এর একটা আলাদা গুরুত্ব আছে আর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটা প্লট কে অভিনব ভাবে কানেক্ট করা হয়েছে, কোনো বাড়তি গল্প ইনক্লুড করা হয়েছে বলে মনে হয়নি। তবে মূল চরিত্রের ক্যারেক্টার ডেভেলাপমেন্ট করতে একটু বেশি সময় নেয়াতে কিছু পার্শ্ব চরিত্রের ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট এ একটু কমতি থেকে গেছে। তবে এইটা গল্পে খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি।
এক্টিং: এই সিনেমায় মূল চরিত্রে অভিনয় করেছে Naveen Polishetty যাকে আপনারা Chhichhore সিনেমায় Acid এর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখেছেন। এই সিনেমাতে তার অভিনয় এক কথায় অসাধারণ। তার স্ক্রিন প্রেজেন্স অনেক বেশি প্রাণবন্ত আর কমিক টাইমিং অনেক দুর্দান্ত। ক্যারেক্টার টা কে যেন নিজের মধ্যেই ধারণ করে নিয়েছিলেন। পার্শ্ব চরিত্রে যারা ছিলেন তাদের নিয়ে বেশি কথা বললে স্পয়লার দেয়া হয়ে যাবে তাই বেশি কথা না বলাই ভালো। কিন্তু ওভারাল কিছু ক্যারেক্টার বাদে আর দুই একটা ইমোশনাল সিন বাদ দিয়ে পুরো সিনেমায় সবার অভিনয় ই অনবদ্য ছিল। সবার কমিক টাইমিং অসাধারণ ছিল যা এই সিনেমাটাকে স্বভাবতই একটা ভিন্নধর্মী অনন্য কমেডি সিনেমা বানায়। প্রতিটা প্লট টুইস্ট মাইন্ডব্লোইং ছিলো যা সহজে প্রেডিক্ট করা অসম্ভব।
সিনেমাটোগ্রাফি: সিনেমাটোগ্রাফি এই সিনেমার একটু দূর্বল একটা দিক। ক্যামেরার কাজ খুব একটা সুনিপুণ ছিল বলা যায় না। কিছু কিছু জায়গায় ইডিটিং এও সমস্যা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। কিন্তু সিনেমার অভিনয় আর গল্প এই সব বিষয়কে বেশি চোখে পরতে দেয় নাই।
ডিরেকশন: একটা সিনেমায় সবকিছু অসাধারণ আর অনবদ্য হলেও সেই সবকিছু মেইন্টেইন করা আর তারপর সেটাকে সিন বাই সিন এক্সিকিউট করা বেশ কঠিন একটা দায়িত্ব যা এই সিনেমার নির্দেশক Swaroop RSJ প্রসংশনীয়ভাবে পালন করেছেন। এতগুলো ক্যারেক্টার আর এতগুলো প্লট টুইস্ট ম্যানেজ করা আসলেই খুব সহজ ব্যাপার না। প্রথম দেখাতে আমি প্লটের কোনো খুঁত ধরতে পারিনি এমনভাবেই নির্দেশনা টা হয়েছে সিনেমায়।
ওভারাল, Agent Sai Srinivasa Athreya একটা অসাধারণ অলরাউন্ড একটা সিনেমা। মাত্র চার কোটি রুপির বাজেটে বানানো এই সিনেমা বলিউডের শত কোটির সিনেমাকেও পিছনে ফেলে দেয়ার মতো। শক্তিশালী গল্প, পার্ফেক্ট কমিক টাইমিং, এংগেজিং স্ক্রিনপ্লে আর দুর্দান্ত অভিনয় সিনেমাটাকে একটা ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যায়। A must watch recommendation from me...
Movies Download Link
FTP Server Movies Download Link(High Speed)
Subtitle Download Link
